এটি বিমলাদাদীর গল্প ; এক মহীয়সী নারীর, যাঁর জীবন বারবার থেমে গিয়েছে বেদনা ও প্রতিকূলতার ধাক্কায়, কিন্তু যিনি প্রতিটি মুহূর্তে অবিচল থেকেছেন তাঁর সাহস, মমতা ও দৃঢ়তায়। এই কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে তাঁর অপরাজেয় মনোবল ও পরিবারের প্রতি গভীর আত্মিক বন্ধন।
বিমলাদাদীর জীবন শুরু হয় এক করুণ ঘটনার মধ্য দিয়ে। তাঁর ছেলে কান্তিলাল যখন মাত্র বারো বছরের, তখনই তিনি স্বামী হারান। এক লহমায় তাঁর জীবন বদলে যায়, তাঁকে হতে হয় একাধারে রুটিরুজির সংগ্রামী ও সন্তানের মা-বাবা দুজনের ভূমিকায়। স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট মুদি দোকানটিই হয়ে ওঠে তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বিমলাদাদী ও কান্তিলাল মিলে অক্লান্ত পরিশ্রমে সেই ছোট দোকানটিকে একসময় রূপ দেন একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়। বিমলাদাদীর ত্যাগ ও নিষ্ঠা তাঁদের পারিবারিক ভিত এতটাই মজবুত করে যে পরবর্তীকালের বহু দুর্যোগেও তাঁরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন। কান্তিলালের জীবনেও আসে প্রেম, বিয়ে ও নতুন দায়িত্ব। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর ক্যানসারে অকাল মৃত্যুর ফলে তাঁর আড়াই বছরের ছেলে শান্তিলাল আবার ফিরে আসে বিমলাদাদীর আশ্রয়ে। আবারও তিনি বুক পেতে দেন দুঃখের ভার বহন করতে। শান্তিলাল ও কান্তিলাল; উভয়ের জন্যই তিনি হয়ে ওঠেন মমতার ছায়া ও শক্তির প্রতীক।
ভাগ্য আবার এক মোড় ঘোরায়, যখন তুলসিভাবীর সুপারিশে তাঁদের জীবনে আসেন বান্নো; এক তরুণী, যাঁর স্বপ্ন সমাজের অবিচারে ভেঙে পড়েছিল। কান্তিলাল তাঁকে বিয়ে করেন, এবং তাঁর শিক্ষাজীবনকে পূর্ণ সহযোগিতা করেন। তাঁদের কন্যা ছুটকির জন্মে পরিবারে আসে নতুন প্রাণ। তাঁদের সম্মিলিত পরিশ্রমে মুদি দোকান একসময় রূপ নেয় একটি সাফল্যমণ্ডিত পাইকারি ব্যবসায়। পরিবারের এই অগ্রযাত্রার মূলেই ছিল বিমলাদাদীর অদম্য সাহস ও শিকড় ছেড়ে না যাওয়ার মানসিকতা। শান্তিলাল ও ছুটকি; দু’জনেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে সেই অধ্যবসায় ও মানসিক দৃঢ়তা। শান্তিলাল আইআইটি-তে সুযোগ পায় এবং পরে পৌঁছে যায় সিলিকন ভ্যালি, আমেরিকায়। ছুটকি তাঁর ভাইয়ের পথ অনুসরণ করে, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আইআইটি থেকে পড়াশোনা করে।এই গল্পের চূড়ান্ত মুহূর্ত আসে আমেরিকায়, যেখানে শান্তিলাল প্রেমে পড়ে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মেয়ের। আর এক অনন্য টুইস্টে ছুটকি প্রেমে পড়ে সেই মেয়ের ভাইয়ের প্রতি। এই আশ্চর্য মিলনে দু'টি বিয়ে একসঙ্গে হয়; এক দ্বিগুণ আনন্দের দিন। পরিবারের সবাই মিলিত হয় আমেরিকায়, এই আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী হতে। এই বইটি কেবল বিমলাদাদীর সংগ্রামের কাহিনি নয় ; এটি এক পরিবারকে গড়ে তোলার, ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখার ও স্বপ্নকে সত্যি করার অনুপ্রেরণাদায়ক উপাখ্যান। বিমলাদাদীর ত্যাগ, ধৈর্য, সাহস ও ভালবাসা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে। তাঁর স্বপ্ন আজ শুধুই একটি পরিবারের নয়; এটি হয়ে উঠেছে এক উত্তরাধিকারের প্রতীক, যা আমাদের শেখায় যে ভালবাসা, নিষ্ঠা ও অটুট ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনে কোনও স্বপ্নই অসম্ভব নয়।
Bimladadi's Dream Bengali Version
- Aurobindo Ghosh
- All items are non returnable and non refundable