কলকাতা নিবাসী নববধূর শাশুড়ি মায়ের সাথে গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত সখ্যতা। মায়ের বাপের বাড়ি কাশীতে; নাম “ঋতম্ভরা”। মায়ের হাত ধরে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন আর গঙ্গা পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে সে আধ্যাত্মিক প্রাচীন ভারতকে চিনতে পারে। কাশীকে জড়িয়ে পুরাণের গল্প গাথা আর ইতিহাসের দীর্ঘকালীন উত্থানপতন তার মনে আলোড়ন তোলে। কি অর্থে রাজঘাট কাশীর প্রাচীনতম, মর্তে গঙ্গা এলেন কিভাবে, রাজা হরিশ্চন্দ্রকে দানবীর বলা হয় কেন এইসব গল্পের মধ্যে দিয়ে সে ভারত-আত্মাকে উপলব্ধি করে। কাশীর সারস্বত সমাজ তাকে ভারতীয় দর্শনের প্রতি কৌতূহলী করে তোলে। বেনারস ঘরানার ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনন্য প্রতিভা, মায়ের দিলরুবায় রাগরাগিনীর সুরের ছোঁয়া তাকে মুগ্ধ করে। মায়ের মনের মূল শিকড়টা যেন এইসব অতীতের অমৃত বস্তুর সন্ধানেই ঘুরে ফেরে।
অকস্মাৎ মায়ের প্রয়াণে বিহ্বল হয়ে পড়ে সে। মায়ের স্মৃতি তর্পণের উদ্দেশ্যে কাশীর পথে পথে, গঙ্গার ঘাটে, বেদ-উপনিষদের চর্চার মধ্যে দিয়ে সে খুঁজে ফেরে তার প্রাণময়ী মাকে। পারিবারিক পটভূমিকায় কাশীধামের ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও নান্দনিক চরিত্রের বিশ্লেষণ করে মনের তাগিদে কলম ধরে সে। ঋতম্ভরা শব্দের অর্থ “সত্য জ্ঞান রূপ চিত্তবৃত্তি”। এখানে মায়ের কুসুম কোমল মনের নিরন্তর স্নেহবর্ষণ, শাস্ত্রীজী আর সাধক মামার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবগভীর আলোচনায় সে হয় আপ্লুত।
একাধারে পরিবার-গাথা, উজ্জ্বল কাশীকথা ও ভ্রমণকাহিনী - এই ত্রিধারা সঙ্গমের অত্যাশ্চর্য আখ্যান সুন্দরভাবে মিলে গেছে লেখিকার অনুসন্ধিৎসা, শ্রদ্ধা ও জীবনবোধের সঙ্গে। ভারত-আত্মার চিরন্তন সংস্কৃতি ও ভাবধারাকে জড়িয়ে এই বহির্দশনের পাশাপাশি অন্তর্দর্শন যেন চিরপথিকের এক অমূল্য আত্মদর্শন।
Kashi Ritambhara
- Sudeshna Chakraborty
- a. Items are non refundable and cannot be cancelled once order is placed.